Skip to main content

বাংলাদেশ: প্রতিবাদ করায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মারধর

কর্তৃপক্ষ হাজারো রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক দ্বীপে স্থানান্তর করার জন্য প্রস্তুত করেছে

বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের মাঝে ভাসান চর অথবা ভাসমান দ্বীপের তীরে অপেক্ষারত মানুষ, ডিসেম্বর ২০১৯ © ২০১৯ এপি ছবি / সালেহ নোমান

(নিউ ইয়র্ক)—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে, ভাসান চর দ্বীপে শরণার্থীরা তাদের আটকের প্রতিবাদ করায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের লাঠি এবং গাছের ডাল দিয়ে মারধর করেছে। শরণার্থীরা তাদের পরিবারের সাথে কক্সবাজার শিবিরগুলিতে পুনর্মিলনের দাবিতে ২০২০ সালের ২১ শে সেপ্টেম্বর থেকে অনশন করে প্রতিবাদ করে আসায় নৌ অফিসাররা শিশুসহ শরণার্থীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই মারধরের ঘটনাটি ঘটে যখন বাংলাদেশ সরকার দ্বীপের আবাসস্থল নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও ভাসান চরে ১০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তরিত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিল।

“ভাসান চরকে একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে তুলে ধরার অস্বচ্ছ প্রচেষ্টার সময়ে, বাংলাদেশ সরকার শিশুসহ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মারধর করে যারা তাদের আটকাবস্থা এবং কক্সবাজারে পরিবারের কাছে ফিরে যাবার জন্য আকুতি জানিয়ে প্রতিবাদ করেছিল,” হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন। "ভাসান চরকে নিরাপদ এবং আবাসনের উপযুক্ত দেখানোর আসল উপায় হল জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের এই দ্বীপটি নিয়ে একটি স্বাধীন মূল্যায়ন করার অনুমতি দেওয়া এবং যে কোন স্থানান্তর স্বেচ্ছাকৃত ভাবে হচ্ছে তা নিশ্চিত করা।"

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আটজন শরনার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে যারা ঐ অনশন প্রতিবাদে অংশগ্রহন করেছিল।

“নৌবাহিনী সদস্যরা গাছের ডাল ও কালো রাবারের লাঠি ব্যবহার করেছিল আমাদের মারধর করার জন্য,” একজন শরণার্থী বলেছেন।  "তারা প্রতিবাদকারী মহিলা এবং পুরুষদের, এমনকি তাদের বাচ্চাদের যারা তাদের মায়ের সাথে দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের মারধর করেছিল।" হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এমন ছবিগুলি যাচাই করেছে যাতে দেখা গিয়েছে মারধরের কারণে শরণার্থীদের আহত হয়েছিল, তবে তারা আঘাতের জন্য চিকিৎসা সেবা পেয়েছে কি না তা জানা যায়নি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কর্তৃক প্রাপ্ত এবং বিশ্লেষণ করা ভিডিও অ্যাকাউন্টে, অনশন প্রতিবাদে এক রোহিঙ্গা মহিলা বলেছিলেন: "আমরা খাবার চাই না, আমরা যা চাই তা আমাদের পরিবারগুলিতে ফিরে যেতে হবে…… এখানে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।“

ভাসান চরে ৩ দিনের জন্য শরনার্থীদের নেতা এবং দ্বীপে আটককৃত কিছু পরিবারের সদস্যসহ কক্সবাজার ক্যাম্প থেকে ৪০ জন্য শরনার্থীদের নিয়ে সরকার একটি “যান এবং দেখুন” ভ্রমণের আয়োজন করেন যার কিছুদিন পরেই শরনার্থীরা অনশন প্রতিবাদ শুরু করেন। পরিদর্শনকালে দ্বীপে আটক শরণার্থীরা তাদের আত্মীয়দের সাথে বাড়িতে ফিরতে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছিল। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দ্বীপের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন, যেমন পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা, চলাচলের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা, জীবিকার সুযোগের অভাব এবং বর্ষা মৌসুমে সুরক্ষা সম্পর্কে ভয়।

অনশন প্রতিবাদে যোগ দেওয়া এক শরণার্থী বলেছিলেন যে, নৌবাহিনী কর্মকর্তারা তাদের বলেছিল যে কক্সবাজারের শিবিরগুলিতে শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া হলেও যারা অনশন পরিচালনা করেছিলেন তাদেরকে আটকে রাখা হবে। কর্তৃপক্ষ তাদেরকে মারধর করার পর, শরনার্থীরা তাদের অনশন প্রতিবাদ বন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু বলেছিল, তারা তাদের পরিবারের কাছে ক্যাম্পে ফিরে যাবার আশা ছেড়ে দেয়নি।

পূর্বে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভাষান চরের ওপর কর্তৃপক্ষের নিপীড়ন এবং নির্যাতনের অভিযোগগুলো লিপিবদ্ধ করেছে। ৩০০ এরও বেশি শরণার্থী যাদেরকে সাগরে কয়েক মাস যাবত ভেসে বেড়ানোর পর উপকূলে আনা হয়েছিল, এবং দ্বীপে সেখানে তারা আটকাবস্থায় আছে কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কয়েক মাস যাবত শরনার্থীদের জন্য জরুরী সেবা প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুত জাতিসংঘ সুরক্ষা পরিদর্শনের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জরুরি প্রস্তুতি, বসবাসযোগ্যতা এবং দ্বীপের সুরক্ষার বিষয়ে কোনো ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষা না করে রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তরিত করায় সরকার তার বারবার করা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন শেষ হওয়ার পরে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরিত করার যে কোন সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাসেবী এবং সম্পূর্ণভাবে অবগত করা প্রয়োজন।

জাতিসংঘ এবং মানবিক কাজে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বার বার উদ্বেগ উত্থাপন করা সত্ত্বেও সরকার সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে শরনার্থীদের ভাসান চরে স্থানান্তরকে পরিচালনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে যা মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে চালিয়ে নেওয়ার সর্বশেষ প্রচেষ্টা বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

বসবাসের অযোগ্য দূরবর্তী এই দ্বীপে মানবিক সাহায্য ও মৌলিক সেবাসমূহ ব্যতীত শত শত  শরণার্থীর নির্বিচারে আটক নিরাপত্তা, চলাচলের স্বাধীনতা, চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার সুযোগ এবং বেঁচে থাকার অধিকার প্রদানের উদ্দেশ্যে করা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতাগুলোকে লঙ্ঘন করে।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে শরনার্থীদের যথাযথভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন, কিন্তু তার সরকার এখন হতাশাগ্রস্ত পুরুষ, মহিলা এবং বাচ্চাদের ভাষানচরে ধরে রেখেছে” অ্যাডামস বলেছেন। “যদি জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা দ্বীপটিকে সুরক্ষিত এবং বসবাসের যোগ্য হিসেবে মনে করে এবং শরনার্থীদের অধিকারকে মর্যাদা দেয়া হয়, তবে লোকেরা নির্দ্বিধায় সেখানে স্থানান্তর করতে বেছে নিতে পারে। কিন্তু পরিবারের সাথে পুনঃর্মিলিত হতে চাওয়ার জন্যে তাদের মারধর করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।“

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Tags