Skip to main content

বাংলাদেশঃ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বন্ধ করুন

স্থানান্তরগুলির জন্য স্বাধীন মূল্যায়ন, শরণার্থীদের ’অবহিত সম্মতি প্রয়োজন

কক্সবাজার শিবির থেকে ৪০ জন শরণার্থীর তিন দিনব্যাপী "যাও এবং দেখো ভ্রমণ" চলাকালীন সময়ে ভাষানচরে থাকা শরণার্থীরা কক্সবাজার ফেরত যাবার জন্যে প্রতিবাদ জানায়, বাংলাদেশ। সেপ্টেম্বর ৫,২০২০ © 2020 Private

(নিউ ইয়র্ক) - হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের অবিলম্বে দুর্গম ভাসান চর দ্বীপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আসন্ন স্থানান্তর বন্ধ করা উচিত। কর্তৃপক্ষ ৪,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীর স্থানান্তরিত করার জন্য একটি কথিত তালিকা প্রস্তুত করেছে, যা ২০২০ সালের ৩রা ডিসেম্বর থেকে বন্দর শহর চট্টগ্রামে স্থানান্তর শুরু করে।

বাংলাদেশ সরকারের উচিত একটি স্বচ্ছ স্থানান্তর প্রক্রিয়া,  সুনির্দিষ্ট তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্থানান্তরিত শরণার্থীদের সম্মতি এবং দ্বীপের ভেতরে ও বাহিরে চলাচলের স্বাধীনতা, এবং জাতিসংঘের স্বাধীন প্রায়োগিকও সুরক্ষার পূর্ব মূল্যায়নের আহ্বানে সাড়া দেয়া।

“মানবিক সহায়তাকারীবিশেষজ্ঞরা সবুজ সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত ভাসান চর দ্বীপে কোনও শরণার্থী স্থানান্তর না করার বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিজ্ঞা, দেশটি সক্রিয়ভাবে পরিত্যাগ করে আসছে,” বলেছিলেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস। "সরকার যদি এই দ্বীপের বসবাসযোগ্যতা সম্পর্কে সত্যিই আত্মবিশ্বাসী থেকে থাকে, তবে তারা স্বচ্ছ থাকবে এবং তড়িঘড়ি করে জাতিসংঘের প্রায়োগিক মূল্যায়নকে এড়িয়ে যাবে না।"

২ রা ডিসেম্বর একটি বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলেছিল যে, এটি ভাসান চরে এই স্থানান্তরের প্রস্তুতির সাথে জড়িত ছিল না এবং "ভাসান চরে কোনও স্থানান্তরিতকরণের আগে ব্যাপক আকারে  প্রায়োগিক সুরক্ষা মূল্যায়ন করা উচিত," একইসাথে পুনর্ব্যক্ত করে বলেছিল যে "সরকার অনুমোদিত হলে" জাতিসংঘ প্রস্তুত ছিল এই জাতীয় মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করতে এগিয়ে যেতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজে তেরিঙ্ক বলেছেন যে ইউএন এই দ্বীপে প্রায়োগিক ও মানবিক পর্যবেক্ষন শেষ না করার আগ পর্যন্ত ভাসান চর স্থানান্তরিত করার বিষয়ে ইইউ কোন মন্তব্য করবে না। জাতিসংঘ আরও বলেছে, যে কোনও স্থানান্তর স্বেচ্ছায় নিশ্চিত করতে সরকারের তার প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান রাখা উচিত।

যদিও সরকার দাবি করে যে কোনও স্থানান্তর স্বেচ্ছাধীন হবে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি ১২ টি পরিবারের সাথে আলাপ করেছিল যারা বলেছিল যে তাদের নাম তালিকায় রয়েছে, তবে তারা নির্দ্বিধায় ও স্বেচ্ছায় স্থানান্তরিত হয়নি। তালিকায় থাকা কিছু শরণার্থী জোরপূর্বক স্থানান্তরের ভয়ে পালিয়ে গেছেন।

"আমার নামটি কিভাবে সেখানে প্রকাশিত হয়েছিল তা আমি জানি না, তবে আমি কখনই স্বেচ্ছায় আমার নামটি তালিকায় রাখিনি," এক শরণার্থী বলেছিলেন। “ক্যাম্প-ইন-চার্জ [ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ বা সিআইসি] আমাকে তার অফিসে ডেকে আমাকে বলার পরে কেবল আমি জেনেছি যে আমি তালিকায় ছিলাম। তার পরে, আমি আমার আশ্রয়স্থল থেকে পালিয়ে এসেছি। আমি এখন শুনছি যে সি আই সি স্বেচ্ছাসেবকদল এবং মাঝিরা (সম্প্রদায়ের নেতারা) আমাকে এবং আমার পরিবারের সন্ধান করছেন। আমি আশঙ্কা করছি যে তারা আমাকে খুঁজে পেলে তারা আমাকে যেতে বাধ্য করবে। "

অন্য একজন শরণার্থী বলেছিলেন, “আমার নাম তালিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তাই এখন সিআইসি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, যেহেতু আমার নাম সেখানে আছে তাই আমাকে অবশ্যই যেতে হবে। তিনি বলেছিলেন, আমি মারা গেলেও তারা আমার দেহটি সেখানে [ভাসান চরে] নিয়ে যাবে। আমি সেই দ্বীপে যেতে চাই না। "

সরকার এই দ্বীপের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে শরণার্থীদের সীমিত আকারে তথ্য সরবরাহ করেছে এবং এমন কিছু অভিযোগ রয়েছে যে কর্তৃপক্ষ সেখানে যাওয়ার জন্য শরণার্থীদের বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং প্ররোচনা দিয়েছিল। একজন শরণার্থী হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছিলেন যে তিনি এই তালিকায় তাঁর নাম দিয়েছিলেন কারণ শিবিরের নেতারা তাকে বলেছিলেন যে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং তাদেরকে ৫ হাজার টাকা (৫৯ ইউএস ডলার) দেওয়া হবে। তবে তিনি দ্বীপটিতে বর্তমানে আটককৃত ব্যক্তিদের কথা শুনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে তার মতামত বদলেছেন এবং দ্বীপে থাকা শরণার্থীদের “কারাগারের মতো সুযোগ-সুবিধায়” রাখা হচ্ছে এবং চলাফেরার স্বাধীনতা নেই।

কিছু শরণার্থী বলেছিল যে তারা স্বেচ্ছায় ভাসান চরে যেতে চেয়েছিল কারণ তাদের মাঝিরা ও সিআইসি স্বেচ্ছাসেবকরা বলেছিলেন যে তারা জীবিকার সুযোগগুলি যেমন মাছ ধরা বা কৃষিকাজ বেছে নিতে সক্ষম হবেন যাতে করে তারা স্বাস্থ্যসেবাগুলি প্রাপ্তির সুযোগ আরও ভালভাবে পাবে, এবং তাদের বাচ্চারা শিক্ষার সুযোগ পাবে।

তবে বর্তমানে এই তিনশ-এরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য এই দ্বীপের অবস্থা খুবই খারাপ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে। দ্বীপে যারা আছেন তারা বলছেন যে তারা চলাচলের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং তাদের স্থায়ী জীবিকা বা শিক্ষার সুযোগ নেই। দ্বীপের শরণার্থীরা বলেছেন, দ্বীপটি ছেড়ে যাওয়া এবং কক্সবাজারের শিবিরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে অনশন ধর্মঘট করতে যাওয়ার পর বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের মারধর করেছিল ।

কক্সবাজারের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা এবং শরণার্থীরা যারা পূর্বে এই দ্বীপে গিয়েছিলেন তারা দ্বীপে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবার অভাব নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। একজন শরণার্থী যিনি সেপ্টেম্বরে "যান এবং দেখুন" পরিদর্শনকালে এই দ্বীপটি পর্যবেক্ষন করতে গিয়েছিলেন তিনি বলেছিলেন, "যদি কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকেন তবে নিকটতম উপায় হলো এমন একটি হাসপাতাল যেখানে পৌঁছাতে ন্যূনতম তিন ঘন্টা নৌকায় ভ্রমণ করতে হয়," যা বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই অসম্ভব হবে। তিনি বলেছিলেন যে দ্বীপের কিছু শরণার্থী তাকে বলেছিল যে এই সফরের কয়েকদিন আগেই একজন শরণার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ তাকে নৌবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিল।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে এই ঘটনাটি ইঙ্গিত দেয় যে দ্বীপে সম্ভবত পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা নেই এবং জরুরী চিকিৎসা পরিস্থিতিতে সাড়া দেওয়ার জন্য কোনও স্থায়ী পরিকল্পনা নেই, বিশেষত যদি হাজার হাজার শরণার্থী দ্বীপে স্থানান্তরিত হয়। ভাসান চর পরিদর্শন করা কিছু শরণার্থী আরও বলেছিলেন যে নিরাপদ ঋতুস্রাবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে দ্বীপের মহিলাদের এবং মেয়েদের সঠিক স্যানিটারি সরবরাহের সু্যোগ নেই।

"যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার মতো রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতিক্রিয়ার সাথে জড়িত দাতা সরকারগুলির রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরিত করার জন্য এই আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া উচিত," অ্যাডামস বলেছেন। "প্রায়োগিক মূল্যায়ন শেষ হওয়ার পরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তগুলি স্বেচ্ছাধীন এবং সম্পূর্ণভাবে অবহিত করে নেয়া দরকার।"

 

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Tags