Skip to main content

বাংলাদেশ: স্বৈরাচারী ধরপাকড় (ক্র্যাকডাউন) এর অজুহাত হিসাবে মহামারী

শরনার্থীদের কক্সবাজারে ফিরিয়ে দিন, জোরপূর্বক গুম এবং বিচার-বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করুন

বাংলাদেশের ঢাকায় লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে নারী অধিকারকর্মী এবং অন্যান্যরা সংসদের বাইরে প্ল্যাকার্ড ধরে রাখেন, অক্টোবর ৯, ২০২০  © এপি ছবি/ মাহমুদ হোসেন অপু

(নিউইয়র্ক) - বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কোভিড -১৯ মহামারী কে স্বাধীন বক্তব্য রোধ করার এবং সমালোচকদের উপর ক্রাকডাউন (কঠোর ব্যবস্থা) নেয়ার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করেছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ তাদের ২০২১ সালের বিশ্ব প্রতিবেদনে বলেছে। সাংবাদিকদ সহ, শিল্পী, ছাত্র, চিকিৎসক, রাজনৈতিক বিরোধী দল্গুলোর সদস্য এবং কর্মীরা যারা মহামারী সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন বা অন্যথায় ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করেছিলেন, কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।

"ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০২০ সালে দেখিয়েছিল যে, এমনকি বিশ্বব্যাপী মহামারীর মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে এটি কোন কিছুই করা থেকে বিরত থাকবে না," বলছিলেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস। "ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কার্টুনিস্ট এবং শিশুর ফেসবুকে সমালোচনা করা নিয়ে চিন্তিত হওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন এবং মহামারীর মধ্যে নিজস্ব কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অপব্যবহারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।"

ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২১ এর ৩১ তম সংস্করণে ৭৬১-পৃষ্ঠায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১০০ টিরও বেশি দেশে মানবাধিকার অনুশীলনগুলির পর্যালোচনা করে। নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথতাঁর প্রারম্ভিক প্রবন্ধে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, যে আগত যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের উচিত তার দেশীয় ও বিদেশি নীতিতে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এমনভাবে স্থাপন করা যেন ভবিষ্যত যুক্তরাষ্ট্রেরপ্রশাসন মানবাধিকারের প্রতি কম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও মানবাধিকার টিকে থাকতে পারে। রথ জোর দিয়ে বলেছেন যে এমনকি ট্রাম্প প্রশাসন বেশিরভাগ মানবাধিকার সুরক্ষা পরিত্যাগ করার পরেও অন্যান্য সরকার অধিকার সমর্থনে উপরের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। বাইডেন প্রশাসনের উচিত এই নতুন সম্মিলিত প্রয়াসে বিচ্ছিন্ন না হয়ে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করা যাওয়া।

বেশ কয়েকটি গণধর্ষণ মামলা প্রকাশের পরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল, যা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতা এবং অপরাধীদের প্রায়শই দায়মুক্তি উপভোগ করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বেসরকারী গোষ্ঠীগুলি কোভিড -১৯ লকডাউন চলাকালীন সময়ে পারিবারিক সহিংসতার প্রতিবেদনগুলিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এক্টিভিস্টদের (কর্মীদের) বাস্তবিক সংস্কারের আহ্বানের পরিবর্তে সরকার তড়িঘড়ি করে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি সংশোধনী অনুমোদন করেছিল।

স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিবেদনে অপর্যাপ্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম এবং জটিল সেবা গ্রহনের সুযোগের ক্ষেত্রে  দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। সরকার স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নিশ্চুপ করে, মিডিয়া সেন্সর করে, যারা কথা বলেছিল তাদের গ্রেপ্তার করে এবং কোভিড -১৯ এর "গুজব" রোধে নজরদারি বাড়িয়ে এর জবাব দেয়।

আপত্তিজনক ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের আওতায় গ্রেফতার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এমনকি ফেসবুকে একটি পোস্টে প্রধানমন্ত্রীকে “অপমান” করার অপরাধে পুলিশ একটি শিশুকেও গ্রেপ্তার করেছে।

কর্তৃপক্ষ কারাগারে আটককৃত ২৩,০০০ জনকে কোভিড -১৯ ছড়িয়ে পড়া থেকে রক্ষার জন্য মুক্তি দিয়েছে, তবে ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করার জন্য যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

সরকার জোরপূর্বক গুম হওয়ার বেআইনী অনুশীলনকে ক্রমাগত অস্বীকার করে চলেছে, এবং জোরপূর্বক অথবা অনিচ্ছাকৃত গুম নিয়ে কর্মরত জাতিসংঘের কার্যনির্বাহী সংস্থা, জাতিসংঘের নির্যাতনের বিরুদ্ধে কমিটি, এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি দ্বারা উত্থাপিত উদ্বেগ সরকার উপেক্ষা করেছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় সম্পূর্ণভাবে দায়মুক্তিজনিত বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের অভিযোগ করা হয়ে থাকে। যদিও, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা মেজর সিনহা রাশেদ খানকে পুলিশ হত্যা করলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়। "ক্রসফায়ার"- যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেয়ার জন্য বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ – দ্রুত কমে এসেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে কর্তৃপক্ষ যখনই চাইবে এই সকল হত্যাকান্ডের একটি অবসান ঘটাতে পারে।

মিয়ানমার নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ার সময় বাংলাদেশ প্রায় ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে, এই সংকটের পক্ষে শরণার্থী শিবিরে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে নিষিধাজ্ঞামূলক নীতিমালা মোতায়েন করে সরকার তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি অবমাননাকর মোড় নিয়েছিল ।

কর্তৃপক্ষ নির্বিচারে ভাসান চর দ্বীপে ৩০০ এরও বেশি শরণার্থীকে আটক করে রেখেছে, এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সুরক্ষা মূল্যায়ন বা সুরক্ষা পরিদর্শন করার অনুমতি দিতে প্রত্যাখান করেছে। দ্বীপের শরণার্থীরা চলাফেরার স্বাধীনতা বা খাদ্য বা চিকিৎসা যত্নের পর্যাপ্ত প্রবেশাধিকার ব্যতীত আটক থাকার কথা বর্ণনা করেছে; কেউ কেউ এই দ্বীপে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মারধরের অভিযোগ করেছে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে নিরাপদে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকার জাতিসংঘের সেক্রেটারি-জেনারেল অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং মানবিক সহায়তাকারী বিশেষজ্ঞের আহ্বান উপেক্ষা করেছে।

মহামারী চলাকালীন সময়ে ব্যাপক পরিমাণ অর্ডার বাতিল হওয়ার পরে, ১ মিলিয়ন গার্মেন্টস শ্রমিকেরও বেশি – যার বেশিরভাগ নারী – সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত হয়েছে, এবং অনেকেই তাদের  পাওনা মজুরি পায়নি। পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের জন্য সরকার কোম্পানি গুলিকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভর্তুকি প্রদান করেছে তবে এটি স্পষ্ট নয় যে কিভাবে শ্রমিকদের পূর্বের বেতনের অর্থ প্রদান করা হয়েছিল, বিশেষত নারীদের যাদের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ বা সুবিধা নাও থাকতে পারে।

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.

Region / Country