Skip to main content

ভারত: সীমান্ত বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তদন্ত করুন

বাংলাদেশ সীমান্তে গুলি, নির্যাতন বন্ধের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দশ বছর

A Border Security Force soldier patrols India's border fence with Bangladesh at Tehatta, West Bengal, India, May 3, 2020. © 2020 Soumyabrata Roy/NurPhoto via AP

(নিউ ইয়র্ক) - ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের সীমান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) দ্বারা সংঘটিত সদ্য উত্থাপিতঅন্যায়ের অভিযোগ গুলোর তদন্ত ও বিচার করা উচিত, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আজ বলেছে। দশ বছর আগে, ভারত সরকার "ট্রিগার হ্যাপি" শীর্ষক হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন প্রকাশের পরে ঘোষণা করেছিল যে, বিএসএফকে অনিয়মিত সীমান্ত অতিক্রমকারীদের বিরুদ্ধে  মারাত্মক গোলাবারুদের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রনযোগ্য ও রাবার বুলেট ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হবে।

ভারতীয় এবং বাংলাদেশী বেসরকারী সংস্থাগুলি জানিয়েছে যে ভারতীয় ও বাংলাদেশ সীমান্তে উভয় বাসিন্দার সাথে বিএসএফ অপব্যবহার সহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অসদাচরণ চালিয়ে যাচ্ছে। গবাদি পশুর ছোটাছুটি, চোরাচালান এবং অবৈধ পারাপার রোধে নিযুক্ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলছেন যে তারা যখন আক্রমণের মুখোমুখি হয়ে থাকেন তখনই কেবল তারা শক্তি প্রয়োগ করে থাকেন।

"সীমান্ত বাহিনীকে সংযত আচরন প্রয়োগ এবং সক্রিয় গোলাবারুদ ব্যবহারে সীমাবদ্ধ করার জন্য ভারত সরকার যে আদেশ দিয়েছে তা নতুন হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অন্যান্য গুরুতর অন্যায়গুলো রোধ করতে পারে নি," হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন। "নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে সরকারের ব্যর্থতা অত্যাচারকে আরো বাড়িয়েছে এবং খুব দরিদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীকে হয়রানি করেছে।"

ভারত সরকার সংযম প্রয়োগ এবং অবৈধ হত্যার অবসান ঘটাতে জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে আদেশ জারি করেছে, এবং ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আলোচনার সময়সহ বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছিল। তবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান অধিকার অভিযোগ করেছে যে ২০১১ সাল থেকে সীমান্ত বাহিনী কমপক্ষে ৩৩৪ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে এবং ২০২০ সালে ৫১ জন হত্যাসহ গুরুতর নির্যাতনের অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে।

২০১১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে বিএসএফ দ্বারা কমপক্ষে ১০৫ টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তকারী ভারতীয় সংস্থা বাঙলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (এমএএসইউএম) বলেছে যে হত্যার প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরো বেশি। মাসুম (MASUM) আরও জানিয়েছে যে বিএসএফ সৈন্যরা সন্দেহভাজনদের নির্বিচারে আটক করেছে এবং নির্যাতন করেছে এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারতীয় বাসিন্দাদের হয়রানি ও হুমকি দিয়েছে। গুলি চালিয়ে মৃত্যুর সাম্প্রতিক অভিযোগের মধ্যে রয়েছে:

  • মাসুম ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জানিয়েছে যে, ২০২০ সালের ১৮ই নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলায় বিএসএফ সৈন্যরা ১৬ বছর বয়সী সমশের প্রামানিককে সীমান্তবর্তী গবাদি পশু পাচারের অভিযোগে মারধর করে এবং গুলি করে হত্যা করে। সীমান্ত পেরিয়ে গবাদি পশু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে সৈন্যরা প্রমানিককে তখন আটক করে, অজ্ঞান হওয়ার আগে পর্যন্ত তাকে বাঁশের লাঠি ও রাইফেল বাট দিয়ে মারধর করে, এবং পরে তাকে বুকে গুলি করে সীমানা বেড়াতে রেখে যায়। হলদিবাড়ি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে, তবে এখনও পর্যন্ত পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
  • ২০২০ সালের ৯ই আগস্ট বিএসএফের এক সৈনিক কোচবিহার জেলায় ২৩ বছর বয়সী সাহিনুর হককে গুলি করে হত্যা করে বলে অভিযোগ করা হয়, মাসুম রিপোর্ট করেছে। প্রায় সন্ধ্যা ৭ টার দিকে, বিএসএফ কর্মকর্তার দ্বারা চালিত একটি রাবারের গুলি হককে আঘাত করে যখন সে তার বাড়ির সামনে ভাই ও চাচাত ভাইয়ের সাথে মুঠোফোনে গেম খেলছিল। এরপরে একজন সৈন্য তাকে মারধর করে গুলি করে বলে অভিযোগ করা হয়। অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
  • সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে যে, ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল বিএসএফের এক সৈনিক বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলায় ১৬ বছর বয়সী বাংলাদেশী ছেলে শিমন রায়কে হত্যা করে। তার বাবা, যিনি একজন স্কুলশিক্ষক জানান, যখন তিনি এবং তাঁর ছেলে তাদের পাট ক্ষেতের চারপাশে একটি বেড়া তৈরি করছিলেন তখন বিএসএফের এক সৈনিক বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভিতরে ঢুকে তাদের জায়গাটি ত্যাগ করতে বলেছিল । তারা যখন তাদের নিজেদের জমিতে ছিল বলে প্রতিবাদ করে, তখন সৈনিকটি ছেলেটির পেটে গুলি করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
  • ২০২০ সালের ৪ জুলাই বিএসএফ সৈন্যরা চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় একজন ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশী লোককে গুলি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় একজন সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, লোকটি গবাদি পশুদের জন্য ঘাস কাটাতে এলাকায় যাওয়ার পরে এবং নিজের অজান্তেই সীমান্ত অতিক্রম করার পরে, বিএসএফ কর্মীরা তাকে হত্যা করে এবং তার মরদেহটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ফেলে রেখে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।  

স্থানীয় বাসিন্দা এবং নেতাকর্মীদের অভিযোগ দায়ের এবং ন্যায়বিচার সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টার ফলাফল হিসেবে তাদের হুমকি ও ভয় দেখানো হয়েছে। মাসুম কর্মীরা বলছেন যে তারা পুলিশ ও বিএসএফের কাছ থেকে নিয়মিত হয়রানির মুখোমুখি হন, সেখানে নির্বিচারে আটকে রাখা এবং মিথ্যা অপরাধমূলক অভিযোগও দেয়া হয়।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ব্যাপকভাবে জনবহুল, প্রচুর সংখ্যক লোকজন স্বজনদের সাথে দেখা করতে, পণ্য কেনার জন্য এবং চাকরির জন্য আসা-যাওয়া করছে। তাদের মধ্যে কিছু ক্ষুদ্র ও মারাত্মক আন্তঃসীমান্ত অপরাধে জড়িত। তবে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিচারের জন্য পুলিশে সোপর্দ করার পরিবর্তে বিএসএফ সৈন্যরা সন্দেহভাজনদের মারধর ও নির্যাতনে প্রায়শই জড়িত থাকে। কিছু সীমান্তরক্ষী বাহিনী গবাদি পশু পাচার বা মানব পাচারে সাহায্য করার মাধ্যমে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে এবং চাঁদাবাজি চেষ্টায় প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী ব্যাক্তিদের ওপর নজরদারি করে।

বাংলাদেশ বারবার সীমান্তে ঘটমান নির্যাতনের প্রতিবাদ করে আসছে। আগস্টে, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে উদ্বেগ উত্থাপন করে বলেছে, "বাংলাদেশ চিহ্নিত করেছে যে এটি সমস্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির লঙ্ঘন এবং ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীকে সর্বাধিক সংযম প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করা উচিত।"

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এমন কোনও মামলা জানে না যেখানে ভারত কর্তৃপক্ষ বিএসএফ সৈন্যদের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে করা নির্যাতনের জন্য দায়বদ্ধ করেছে। এর মধ্যে জানুয়ারী ২০১১ সালে বিএসএফ গুলি করার পরে সীমান্তে তারের বেড়াতে আটকা পড়ে থাকা বাংলাদেশী ১৫ বছরের এক কিশোরী ফেলানী খাতুনের বহুল প্রচারিত মামলা রয়েছে। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে বিশেষ বিএসএফ আদালতে দুটি দফায় বিচার হয়েছে, যা তাকে গুলি করার অভিযোগে বিএসএফ কনস্টেবলকে খালাস দিয়েছে। মামলায় নতুন তদন্তের আবেদন এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মুলতুবি রয়েছে

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে, ভারত সরকারের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের উচিত সামরিক বাহিনী ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কিত জাতিসংঘের মূল নীতিমালাগুলো মেনে চলা। নীতিগুলি কেবলমাত্র প্রাণ রক্ষার জন্য এ ধরনের প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বিএসএফের সদস্যদের বিচারের অধীনে আনার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থার ব্যর্থতার বিষয়টি বিবেচনা করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের উচিত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত সকল স্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা এবং তাদেরকে বেসামরিক আদালতে বিচার করা উচিত।

“ভারত সরকারের সীমান্তে সৈনিকদের দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান করে বাংলাদেশ সীমান্তে নির্যাতন প্রতিরোধের শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোর প্রতিশ্রুতি প্রমান করা উচিত,” গাঙ্গুলি বলেছেন। "অপরাধের জন্য দায়ী নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে ভারত এই অঞ্চলে আইনের শাসনের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে পারে।"

Your tax deductible gift can help stop human rights violations and save lives around the world.